অ্যাডিনো নিয়েই ব্যতিব্য়স্ত ছিল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। একের পর এক শিশু আক্রান্ত এই ভাইরাসে। এখন আবার তার দোসর হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা। এই ভাইরাস অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সারা ভারতেই এই ভাইরাস এখন মাথাব্যথার কারণ। ইনফ্লুয়েঞ্জা এইএচ৩এন২ একবারে নতুন একটি স্ট্রেইন। এই ভাইরাসটি শুধু দ্রুত ছড়াচ্ছে না, পাশাপাশি বহু ক্ষেত্রে গুরুতর দিকে নিয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি। কারও কারও হচ্ছে নিউমোনিয়া। সচেতন থাকাই এখন বাঁচার একমাত্র পথ।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, কাশি একসঙ্গে শুরু হচ্ছে। তারপর কিছুদিন যেতেই কমে যাচ্ছে জ্বর। তবে কাশি থামছে না। অনেকদিন ভোগাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কলকাতা শহরের বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ জানালেন, এমন রোগী আমরা এই বছর বেশি সংখ্যায় পাচ্ছি। জ্বর কমে গেলেও থাকছে কাশি। এনাদের কিন্তু চিকিৎসা দরকার। তাই অসুখ ফেলে না রেখে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এই ভাইরাস অনেক সময় ফুসফুসে সমস্যা তৈরি করছে। ফুসফুসের শ্বাসনালীতে হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি। ফলে জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কাশি থেকে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অনেকের আবার দমকা কাশি ৪ সপ্তাহ থেকে ২ মাস পর্যন্তও রয়ে যাচ্ছে। ফলে সমস্যা একটা থেকেই যায়। এছাড়া যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের মধ্যে কাশির প্রবণতা থাকছে বেশি। পাশাপাশি অ্যাজমা ও সিওপিডি থাকলে তো কথাই নেই। সেক্ষেত্রেও কাশি হচ্ছে। রোগীরা সাধারণত রাতের দিকে কাশির অভিযোগ করছেন। শুলেই কাশি হচ্ছে। একবার শুরু হলে আর থামছে না। এক নাগাড়ে কাশতে হচ্ছে, এমনটাই জানালেন ডা: পাল। তিনি আরও জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাশিতে কফ থাকছে না। শুষ্ক কাশি হচ্ছে। বারবার কাশির কারণে গলায় ব্যথাও হচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে আসা জরুরি। তারপরই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারবেন। অন্যথায় স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।
এই রোগের প্রধান চিকিৎসা হল কাফ সিরাপ। বিভিন্ন ধরনের কাফ সিরাপ রয়েছে। সেই কাফ সিরাপ দারুণ কাজ করতে পারে। তবে অনেকে নিজের বুদ্ধিতে কাফ সিরাপ কিনে খান। এটা বিরাট ভুল। আসলে এক এক ধরনের কাফ সিরাপের, এক এক রকম কাজ। একজন চিকিৎসকই সঠিক কাফ সিরাপ আপনার জন্য বেছে দিতে পারেন। নিজে কিনলে ক্ষতি আপনারই। হিতে বিপরীত হবে। কাফ সিরাপ খাওয়ার পাশাপাশি স্টিম নিতে হবে। জল গরম করুন। তারপর একটি কাপড় মাথার উপর থেকে এনে জল থেকে ওঠা বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে টানুন। এভাবেই মিনিট পাঁচেক করুন। এতে কাশি কমবে দ্রুত। তবে অনেকেই অহেতুক এই অসুখে অ্যান্টিবোয়াটিক খান। অ্যান্টিবায়োটিক এক্ষেত্রে কোনও কাজের নয়। ভাইরাসজনিত অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে তেমন লাভ হয় না। একমাত্র সেকেন্ডারি ইনফেকশন থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিবয়োটিক দিতে পারেন।
এই ভাইরাসজনিত অসুখ প্রতিরোধের উপর জোর দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক। তাঁর কথায়, কোভিড নিয়ম মেনে চলুন। নিয়মিত হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। মাস্ক পরুন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিন। ব্যস, এই কয়েকটি কাজ করতে পারলেই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই দুশ্চিন্তা নয়।