বাংলার নয়া রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে অহেতুক মুখ খুলতে বারণ করা হলো বঙ্গ বিজেপি-র নেতাদের। বাংলার সাংবিধানিক প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই সরকারের সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলছেন নবনিযুক্ত রাজ্যপাল। আবার তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর। নরেন্দ্র মোদির পছন্দের আমলা ছিলেন তিনি। তাঁকে ‘ম্যান অফ আইডিয়া’ বলেও সম্মোধন করতেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির ইচ্ছাতেই আনন্দ বোসকে বাংলার রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়। কিন্তু রাজভবনের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যের সঙ্গে সংঘাতের পথ এড়িয়ে সুসম্পর্ক রেখে চলছেন তিনি। এমনকী, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাও করেন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু-সহ একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)।
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের রোষের মুখে এবার বঙ্গ বিজেপির একাংশ। শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্তদের বক্তব্যে আদপে প্রধানমন্ত্রী কালিমালিপ্ত হবেন বলেই জানান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সিভি আনন্দ বোস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তাঁকে নিয়ে বিরোধী দলনেতা ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদের মন্তব্য নজরে আসে দিল্লির নেতাদের। আবার দিলীপ ঘোষ বা সুকান্ত মজুমদারদের নরম অবস্তানও নজরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। কর্মজীবনে দু’বছর কলকাতায় কাজ করে গেলেও বাংলা ভাষা সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা কম। তাই বাংলা শেখার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। সরস্বতী পুজোর দিন তাঁর হাতেখড়ি অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী-সহ একাধিক মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তবে বিরোধী গেরুয়া শিবিরের কোনও হেভিওয়েট নেতা সেদিন রাজভবনে উপস্থিত ছিলেন না। বরং রাজ্যপালের হাতেখড়ি নিয়ে আক্রমণের রাস্তায় হাঁটেন শুভেন্দু অধিকারী, স্বপন দাশগুপ্তরা। “কার হাতে হাতেখড়ি নিচ্ছেন তা আগে দেখে নেওয়া উচিৎ”, সতর্কবার্তা দেন দিলীপ ঘোষ। আবার পূর্ব মেদিনীপুরের এক সভা থেকে সি ভি আনন্দ বোসকে (CV Ananda Bose) তীব্র কটাক্ষ করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজভবনের হাতেখড়ি অনুষ্ঠান এড়িয়ে যান। সব থেকে বেশি সরব ছিলেন স্বপন দাশগুপ্ত। রাজ্যপালকে নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণ করে বলেন, “উনি অবসরের স্বর্গ রাজ্য তথা পেনশনার্স প্যারাডাইস হিসেবে এখানে আসেননি। ভোট পরবর্তী হিংসা পরিস্থিতি দেখতে আগে এসেছিলেন। সেই পরিস্থিতি এখনও আছে। সেসব ভুলে অনেক বেশি যেন প্লে এক্টিং হচ্ছে।” রাজ্যপালের লেখা বই সরকার অনুবাদ করবে। বইমেলায় বেরোবে। এসব আদিখ্যেতা বলেই আখ্যা দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ।
রাজ্যপালকে কেন্দ্র করে রাজ্য নেতাদের দু’রকম অবস্থানও ভালভাবে নেননি অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, বিএল সন্তোষরা। তাই ভবিষ্যতে রাজ্যপাল সম্পর্কে কিছু বলার আগে ভাবনাচিন্তা করে বক্তব্য রাখতে নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, সম্প্রতি দিল্লিতে আসেন বাংলার নতুন রাজ্যপাল। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় হেভিওয়েট মন্ত্রীদের সঙ্গে কথাও হয়। তারপরেই এমন নির্দেশ বলে জানা গিয়েছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দিল্লিতে এসে রাজ্যের এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কার্যত নালিশ জানান রাজ্যপাল। তারপরেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বঙ্গ নেতাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।