নিজস্ব প্রতিবেদন: দেশকে বাঁচাতে দেশের মানুষ গুলোকে বাঁচাতে কত হাজার হাজার মানুষই না শহীদ হয়েছে। ভারত জুড়ে চলছে ইংরেজদের অত্যাচার। প্রতি মুহূর্তে কতই না প্রাণ যাচ্ছে কালো চামড়ার মানুষ গুলোর অত্যাচারী সাদা চামড়ার মানুষ গুলোর হাতে। সহ্য হচ্ছিল না আর সেই অত্যাচার। সালটা তখন ১৮৫৭। উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বারাকপুরে সিপাহীদের প্যারেড ময়দানে ২৯ মার্চ উপমহাদেশের প্রথম ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন সিপাই মঙ্গল। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চের বিকেলে, ৩৪তম বেঙ্গল নেটিভ ইনফ্যান্ট্রির সেনাপতির সহকারী লেফটেন্যান্ট বৌগ অবগত হন যে বারাকপুরে অবস্থিত তার রেজিমেন্টের বেশ কয়েকজন সিপাহী উত্তেজিত অবস্থায় ছিল।

তাদের মধ্যে মঙ্গল পাণ্ডে নামে একজন গাদাবন্দুকে সশস্ত্র প্যারেড ময়দানে রেজিমেন্টের প্রহরী কক্ষের সামনে অবস্থান করছিলেন যিনি সিপাহীদের বিদ্রোহের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এমনকি সে প্রথম সাহস যুগিয়ে একজন ইউরোপিয়কে গুলি করার হুমকিও দেয়। পরবর্তী তদন্তে সাক্ষ্যগ্রহণে রেকর্ড করা হয়েছে যে ভাং পানে নেশাগ্রস্থ পান্ডে সিপাহীদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে অস্ত্র আটক করেছিলেন এবং ব্যারাকপুর সেনানিবাসের নিকটবর্তী একটি স্টিমারে আগত ব্রিটিশ সৈন্যদের অবতরণের খবর পেয়ে কোয়ার্টার-গার্ড ভবনে দৌড়ে গিয়েছিলেন।বৌগ অবিলম্বে সশস্ত্র হয়ে ঘোড়ায় চড়ে সেখানে উপস্থিত হন। পাণ্ডে ৩৪তম কোয়ার্টার-গার্ডের সামনে থাকা স্টেশন বন্দুকের পিছনে অবস্থান নেয়ে এবং বাগকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তবে পাণ্ডে লক্ষভ্রষ্ট হলেও, তার ছোড়া গুলি বাগের ঘোড়াকে আঘাত করেছিল এবং ঘোড়া আরোহী বৌগকে মাটিতে ফেলে দেয়। বৌগ দ্রুত নিজেকে রক্ষা করে এবং একটি পিস্তল জব্দ করে গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পাণ্ডের দিকে এগিয়ে গেলেন। তবে তিনিও লক্ষভ্রষ্ট হয়েছিলেন। বাগ তার তলোয়ার বের করার আগেই পাণ্ডে তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করেছিলেন এবং সেনাপতির সহকারীর নিকটস্থ হয়ে বৌগের কাঁধে ও ঘাড়ে তলোয়ার আঘাত করে তাকে মাটিতে ফেলে দেন।

এরপরই অপর সিপাহী শায়খ পল্টু হস্তক্ষেপ করেছিলেন, এবং পাণ্ডেকে বাঁধা দেবার পাশাপাশি নিজের বন্দুকে গুলি ভরার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময়হিউসন নামে একজন ব্রিটিশ সার্জেন্ট-মেজর প্যারেড ময়দানে পৌঁছেন। এরপরেই একজন দেশীয় আধিকারিককে ডেকে পাণ্ডেকে গ্রেপ্তারের জন্য বলেন। এরপরেই হঠাৎ একটা গুলির শব্দ, পাণ্ডে গুলি চালায়। হঠাৎই একটা অভিযোগ লেফটেন্যান্ট বৌগের সাথে লড়াই করার সময় হিউসন পাণ্ডের প্রতি অভিযোগ করে। পাণ্ডের মুখোমুখি হওয়ার সময় হিউসন পাণ্ডের গাদাবন্দুকের আঘাত পেয়ে পিছন থেকে মাটিতে ছিটকে পড়েন। গুলির শব্দে ব্যারাকের অন্যান্য সিপাহী এগিয়ে আসে। যদিও তারা শুধুই নিরব দর্শক। তখন শাইখ পল্টু দুই ইংরেজকে রক্ষা করার চেষ্টা করার সময় অন্যান্য সিপাহীদের তাকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

সিপাহীরা তার পিঠে পাথর ও জুতা রেখে আক্রমণের চেষ্টা চালায়। এরপরে কোয়ার্টার-গার্ডের কিছু সিপাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বাদাপ্রাপ্ত হয়। এরপরে তারা শায়খ পল্টুকে হুমকি দেয় এবং পাণ্ডেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। প্রহরীদের গাদাবন্দুকের বাটে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় তিনি নিজেকে একদিকে এবং বৌগ ও হিউসনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।এরই মধ্যে, ঘটনার একটি প্রতিবেদন কমান্ডিং অফিসার জেনারেল হিয়ার্সির কাছে পৌঁছানো হয়েছিল, যিনি পরে তার দুই অফিসার ছেলের সাথে মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি পাহারার উপরে উঠে তার পিস্তল টানেন এবং মঙ্গল পাণ্ডেকে আটক করে তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। জেনারেল প্রথম আদেশ অমান্যকারীকে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। কোয়ার্টার-গার্ডের পড়ে থাকা লোকেরা হেরসিকে পাণ্ডের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

পাণ্ডে তখন নিজের বন্দুকের নলটি তার বুকে রাখলেন এবং পা দিয়ে ট্রিগার চেপে বন্দুকের গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। যদিও তা চরিতার্থ হয় না। এরপর চিকিৎসা শুরু হয়পাণ্ডের। সে সুস্থ হতেই এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়। সেই সময় তিনি কোন নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রভাবে ছিলেন পাণ্ডে বলেছিলেন তিনি নিজেই বিদ্রোহ করেছেন এবং তাকে উৎসাহিত করতে অন্য কোনও ব্যক্তি কোনও ভূমিকা পালন করেননি। বিচারের রায়ে জিমাদার ঈশ্বরী প্রসাদ সহ পাণ্ডেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৮৫৭ সালের ৮ এপ্রিল, প্রকাশ্যে মঙ্গল পাণ্ডের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। এরপরে ইংরেজ অফিসারদের আদেশ অমান্য করে মঙ্গল পান্ডেকে নিবৃত্ত না করার জন্যে ২১ এপ্রিল জিমাদার ঈশ্বরী প্রসাদকে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। তবে, পাণ্ডেদের মৃত্যু হয় না। তারা অমর। সেই জন্যই তোবারাকপুরে ব্রিটিশ সেনাদের যে স্থানে পাণ্ডে আক্রমণ করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেখানে তার স্মরণে শহীদ মঙ্গল পান্ডে মহা উদ্যান নির্মাণ করা হয়েছে। পরে বারাকপুর সেনা ক্যাম্প এলাকায় তার একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল, যা মঙ্গল পাণ্ডে বাগান নামে পরিচিত। অভিনয়ের পাতাতেও জায়গা করে নেয় সে।

২০০২ সালের ১২ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিলমঙ্গল পাণ্ডে: দ্য রাইজিং শিরোনামে বিদ্রোহের ঘটনাটগুলির ক্রম ভিত্তিক একটি চলচ্চিত্রে কেতন মেহতার পরিচালনায়। পাণ্ডের ভূমিকায় অভিনয় করে ভারতীয় অভিনেতা আমির খান।কারণ পাণ্ডে যে সকলের অলঙ্কার, অহঙ্কার।
