পায়েল গাঙ্গুলি: ছোট বেলা থেকেই স্কুল যেতে পছন্দ করতেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার কাছে স্কুল ছিল একটি জেলখানা। যখন অন্যসব ছাত্ররা মন দিয়ে মাস্টার মশাইয়ের পড়া শুনছে ছোট্ট রবি তখন আকাশের দিকে আকাশ দেখছে। ছোট বেলার এই কষ্টটা উনি বড়ো হয়েও মনে রেখেছিলেন। তাই এক নতুন ধরণের ইস্কুল শুরু করেছিলেন বোলপুরেই তাদের শান্তিনিকেতন বাড়িতে। সে স্কুলে ছিল না কোনও ক্লাস ঘর। ছিল না কোনও দেওয়ালের গন্ডি। ক্লাস বসতো পলাশ,ছাতিম কিম্বা আম গাছের নিচে।

১৯০১ সালে যখন প্রথম স্কুলটি শুরু করেন তার নাম দিয়েছিলেন ব্রম্ভচার্য্য আশ্রম। সম্বল বলতে ছিল নতুন ইচ্ছে পাঁচজন ছাত্র,আর পাঁচজন মাস্টার মশাই। রবি বাবু বিশ্বাস করতেন পাশ্চত্য শিক্ষায় যন্ত্র তৈরী করে,মানুষ নয়। উনি জানতেন ব্রিটিশ শাসকরা ভারতবর্ষে প্রভুত্ব করার জন্য পাশ্চত্য শিক্ষার মগজ ধোলাই চালু করেছিল। রবীন্দ্রনাথ পুরোনো বৈদিক শিক্ষার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা লব্ধ শিক্ষার দিকে জোর দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ চাইতেন তার প্রতিটা ছাত্র যেনও বিশ্ব ভাতৃত্বের মানেটা বোঝে।

গান্ধীজির স্বপ্ন গ্রাম উন্নয়নকেও প্রাধান্য দিয়েছিলেন এই শান্তিনিকেতন। প্রাচীন গুরু শিষ্য পরম্পরা এবং গুরুকুলের জীবন ধারাও শুরু হয় এই শান্তিনিকেতনে। শারীরিক মানসিক দিকেও তাঁর ছিল সমান দৃষ্টি। তাই তো যোগ ব্যায়াম এবং খেলা ধুলোয় শান্তিনিকেতনের একটি গুরুতূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছিল।তৎকালীন ভারতবর্ষে এ ছিল এক অনন্য নিদর্শন। পাশ্চাত্য শিক্ষায় যেখানে পরীক্ষার চোখ রাঙানি থাকতো শান্তিনিকেতনে সেখানে শুধুই ছিল অনাবিল শেখার আনন্দ।
