24 C
Kolkata

Amrita Lal Basu: ব্রিটিশ যুগের বাংলার পাবলিক থিয়েটারের পথিকৃৎ

স্বর্ণালী মল্লিক: অমৃত লাল বসু নাট্যকার এবং মঞ্চ অভিনেতা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ যুগে বাংলার পাবলিক থিয়েটারের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি তার প্রহসন এবং ব্যঙ্গ নাটকের জন্য সুপরিচিত। ১৭ এপ্রিল, ১৮৫৩ সালে অমৃতলাল বসু ব্রিটিশ আমলের বাঙালি নাট্যকার ও নাট্য অভিনেতা। তার জন্ম হয়েছিল কলকাতায়। নাটক রচনা এবং নাট্যাভিনয়ে সাফল্যের জন্য জনসাধারণের কাছে রসরাজ নামে খ্যাত ছিলেন। গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফীর উৎসাহে তিনি ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, বেঙ্গল, স্টার, মিনার্ভা ইত্যাদি রঙ্গমঞ্চে সুনামের সাথে অভিনয় করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক জগত্তারিণী পদক লাভ করেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রথম বাঙালি মহিলা এম.এ চন্দ্রমুখী বসু তার সম্পর্কিত বোন।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার আগে তিনি জেনারেল অ্যাসেম্বলির ইনস্টিটিউশন (বর্তমানে স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে স্নাতক হন, যেখান থেকে তিনি দুই বছর অধ্যয়নের পরে বাদ পড়েন। তিনি কলকাতার কম্বুলিয়াটোলা বঙ্গ বিদ্যালয়ে বাল্যশিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর কিছু সময়ের জন্য হিন্দু স্কুলে পড়াশোনা করার পর তিনি ১৮৬৯ সালে জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। এরপর দুই বছর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। তিনি কাশীতে হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেন।

কিছু সময়ের জন্য হোমিওপ্যাথি চর্চার পর তিনি সরকারী চিকিৎসক হিসাবে ফোর্টব্লেয়ার যান। স্বল্প সময়ের জন্য পুলিশ বিভাগেও কাজ করেছেন। তিনি ১৮৭২ সালের ৭ই ডিসেম্বর জোড়াসাঁকোতে মধুসূদন সান্যালের বাড়িতে “নীলদর্পণ নাটকে অভিনয় করেন। পরে ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল, গ্রেট ন্যাশনাল অপেরা কোম্পানি, মিনার্ভা, স্টার, বেঙ্গল প্রভৃতি রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করেন। তিনি মোট চল্লিশটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যাদের মধ্যে চৌত্রিশটি হলো নাটক। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে তরুলতা (১৮৯১), বিমাতা বা বিজয় বসন্ত (১৮৯৩), হরিশচন্দ্র (১৮৯৯), এবং আদর্শ বন্ধু (১৯০০)। প্রহসন রচনায় সিদ্ধহস্ত হলেও তিনি এতে রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করে তিনি তাজ্জব ব্যাপার প্রহসন রচনা করেন। একাকার প্রহসনে নিচু জাতির ইংরেজি শিক্ষার বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্রুপ করেন। এছাড়া কালাপানি প্রহসনে হিন্দুদের সমুদ্রযাত্রা এবং বাবু প্রহসনে দেশের প্রগতিশীল সামাজিক আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রহ্মসমাজকে নিয়ে ব্যঙ্গ করেন।

আরও পড়ুন:  Fish Recipe: একঘেয়ে মাছের ঝোল আর নয়, রেঁধে ফেলুন ছোট মাছের ভুনা

হাস্যরসাত্মক নাট্যরচনার জন্য তিনি স্বদেশবাসীর কাছে “রসরাজ” উপাধি পেয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের যুবরাজের আগমন উপলক্ষে উকিল জগদানন্দের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ঘটনাকে ব্যঙ্গ করে রচিত নাটিকা পরিচালনার জন্য আদালতে দণ্ডিত হন। এই ব্যাপারে সরকার মঞ্চাভিনয়ের জন্য ১৮৭৬ সনে আইন রচনা করে।

অমৃতলাল বসু যে সময় জন্মগ্রহণ করেন, তখন সমাজে পেশা হিসেবে থিয়েটারকে বিশেষ সুনজরে দেখা হত না। থিয়েটারি ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এবং তাঁর জীবন ও কর্ম যে এই থিয়েটারকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল তাও সুনিশ্চিত। নাটক, প্রহসন, ব্যঙ্গ–কৌতুকময় কাব্য তাঁকে রসরাজের মর্যাদা এনে দিয়েছিল, খুব খাঁটি কথা। কিন্তু নাটকের প্রয়োজন মিটিয়েই তার সার্থকতা ফুরিয়ে যায়নি, তার একটি সামাজিক আঙ্গিক ছিল। সেদিন যা উপলব্ধি করা গিয়েছিল, আজকের সমাজে তা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। এখানেই ‘রসরাজ‘-এর সার্থকতা।

রীতিমতো বনেদি পরিবারের সন্তান পেশা হিসেবে ‘থ্যাটার‘কে বেছে নিচ্ছেন, সামাজিক গঞ্জনার নিয়তি তাঁর জন্য অবধারিত ছিল। তার ব্যতিক্রমও হয়নি। জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ় ইনস্টিটিউশনের কৃতি ছাত্র তিনি, এন্ট্রান্স পাশ করে মেডিকেল কলেজে ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু অসমাপ্ত থেকে যায় ডাক্তারি শিক্ষা, তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় তিনি পারঙ্গম ছিলেন। কাশীর বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক লোকনাথ মৈত্রের কাছে শেখা বিদ্যে ব্যর্থ হতে দেননি। কলকাতায় বেশ পশার জমিয়েছিলেন একটা সময়। তাঁর কর্মজীবনের গ্রাফটিও বেশ আকর্ষণীয়। পোর্টব্লেয়ারে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে যান। ডাক্তারির পাশাপাশি কিছুকাল সেখানে পুলিশের চাকরিও করছেন।মাঝে কিছুকাল শিক্ষকতা। সব মিলিয়ে পেশাদারী রঙ্গমঞ্চে প্রবেশের আগে তিনি চিকিৎসক, শিক্ষক, পুলিশের চাকরিতে নিযুক্ত ছিলেন। সেই সময়ের নিরিখে পেশা হিসেবে তিনটিই লোভনীয়। কিন্তু নাটকের সামাজিক প্রয়োজনটা বোধহয় তৎকালীন সমাজে কিছু বেশিই ছিল।

আরও পড়ুন:  Card Game:তাসের ৪জন রাজা কিন্তু গোঁফ কেনো ৩ নের? জানলে চমকে যাবেন!

অর্ধেন্দুশেখর মুস্তফির সহযোগিতায় অমৃতলাল ১৮৭২ সালে ন্যাশনাল থিয়েটারে মঞ্চস্থ নীলদর্পণ নাটকে সৈরিন্ধ্রীর ভূমিকায় প্রথম অভিনয়ে অবতীর্ণ হন। পর্যায়ক্রমে নাট্যসম্রাট গিরিশচন্দ্র ঘোষের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা জন্মে। ১৮৭৫ সালে তিনি গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের ম্যানেজার নিযুক্ত হন। প্রিন্স অব ওয়েলসের (সপ্তম এডওয়ার্ড) কলকাতায় আগমন ও জনৈক রাজভক্তের চাটুকারিতাকে ব্যঙ্গ করে লেখা গজদানগদ ও যুবরাজ প্রহসনে অভিনয়ের কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৮৭৬ সালে ব্রিটিশ সরকার ভারতে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করে। ১৮৮৮ সালে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার ভেঙ্গে যাওয়ার পর অমৃতলাল স্টার থিয়েটারে যোগ দেন এবং দীর্ঘ ২৫ বছর এর সঙ্গে যুক্ত থেকে বহু নাটকের অভিনয় ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন।

Featured article

%d bloggers like this: