শ্রাবণী পাল: নাটকীয় দৃশ্য। শনিবার সকাল থেকে নাট্যমঞ্চে পরিণত হয়েছিল পাক অ্যাসেম্বলি। শত চেষ্টা করেও আস্থাভোট আটকাতে পারলেন না ইমরান খান। কুর্সি ছাড়া হলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ থেকে ‘প্রাক্তন’দের তালিকায় নাম নথিভুক্ত তাঁর। আস্থা ভোট শুরুর পরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ছাড়েন ইমরান। নিজের বাসভবনের দিকে যাওয়া শুরু করেন। ইমরানের বিরুদ্ধে ১৭৪টি ভোট পড়েছে। ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন ছিল গদি ছাড়া করতে। অধিক ২টো ভোট পেয়ে সরকার পড়ল ইমরানের। রাস্তায় সমর্থকদের ঢল থাকলেও সংসদে সমর্থন নেই তাঁর।
রাত ৯টায় নিজের বাড়িতে বৈঠক ডেকেছিলেন ইমরান। হাসপাতালগুলিতে জরুরি অবস্থা জারি হয়। বিমানবন্দরগুলিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। কোনও মন্ত্রী বা আধিকারিক যেন পালাতে না পারে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আর্মি প্রধান, আইএসআই প্রধান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার। তাঁদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন ইমরান। এরপরই সংসদে এসে (কাঁপা কাঁপা স্বরে) নিজের ইস্তফার কথা জানান স্পিকার আসাদ কোয়াসারি। এরপরই প্রশ্ন ওঠে তাহলে আস্থাভোট কে করাবে? কারণ ভোটাভুটি না হলে সুপ্রিমকোর্ট হস্তক্ষেপ করবে। আইনি সিদ্ধান্ত নেবে। বৈঠকের পরই স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ইস্তফা দেন। স্পিকারের কুর্সি বসেন সর্দার আয়াজ সাদিক। নিজের মুখে আস্থা ভোটের সূচনা করেন তিনি। ৯ এপ্রিল (পাকিস্তানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী) রাত ১১টা বেজে ৫৮ মিনিট নাগাদ অধিবেশন স্থগিত করেন সাদিক। ১০ এপ্রিল রাত ১২টা বেজে ২মিনিট নাগাদ ফের শুরু হয় অধিবেশন। চালু হয় ভোটাভুটি। এরইমধ্যে সংসদে আসেননি ইমরান খান। নিজের হার মানতে পারেননি তিনি। এমনকী সংসদে তাঁর দলের কেউই উপস্থিত হননি। চক্ষুলজ্জার কারণেই নাকি আসেননি। কটাক্ষ করছেন বিরোধীরা। ফাবাদ চৌধুরী ট্যুইট করে জানিয়েছেন, “একজন ভালো মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হল। ঠকবাজদের জয়জয়কার।” রাত ১২টা ২৬ মিনিটে (পাকিস্তানি সময়) ইলেকশন কমিশনের দপ্তরও খুলে দেওয়া হয়। রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ ইমরান সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও করে।
শনিবার অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি হচ্ছে না। জানিয়ে দিয়েছিল পাক সংবাদমাধ্যম। পাকিস্তানের অ্যাসেম্বলিতে বিরোধীদের প্রতিবাদের মধ্যেই মুলতুবি করা হয়েছিল অধিবেশন। ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত ১০ টায় অধিবেশন বসার কথা ছিল। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের একটি অংশের দাবি, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুলতুবির কারণে তা হয়নি। এদিকে গ্রেপ্তারির দাবি তুললেন বিরোধী নেত্রী। “দেশকে বাঁচাতে চাইলে এখনই ইমরান খান ও ডেপুটি স্পিকারকে গ্রেফতার করা হোক।” দাবি তুললেন বিরোধী নেত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ। মনে রাখা দরকার, অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়াকে বৃহস্পতিবার অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট।
দীর্ঘ বিলম্বের পর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার আসাদ কায়সার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি করেন। জানানো হয়, জোহরের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন শুরু হবে। বিরোধীরা জানিয়েছেন, ইচ্ছা করেই অধিবেশন বিলম্বিত করা হচ্ছে। রাত ৯টায় নিজের বাসভবনে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকলেন ইমরান খান। সেই মতো, তাঁর বাড়ি আর্মি চিফ কামার জাভেদ বাজওয়া গিয়েছিলেন। আইএসআই প্রধানও ছিলেন। স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারকে নিয়ে বৈঠক সারেন তিনি। কিন্তু কিছুই হল না তাতে। বিরোধী নেত্রী মরিয়ম নওয়াজ শরিফ ট্যুইট করে ভোট করানোর আবেদন জানিয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, রাত দশটার মধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি সেরে ফেলতে হবে। যদিও তা হয়নি। তবে কি আদালত অবমাননা হতে চলেছে? অনাস্থাভোটে ইমরানের হার কার্যত নিশ্চিত। সুপ্রিম কোর্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থাভোট করানোর রায় দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আর্জি জমা পড়ল। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হয়েছে এইদিন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী চৌধুরী ফওয়াদ হোসেন নিজের টুইটার হ্যান্ডলে নিজের পরিচয় প্রাক্তন মন্ত্রী করে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ সরকার পড়ার গন্ধ আগেই ছড়িয়েছিল। খুব শীঘ্রই শাহবাজ শরীফ প্রধানমন্ত্রীর আসন পাবেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।