নিজস্ব সংবাদদাতা : ১৯২৯ সাল, ডিসেম্বর মাসে লাহোরে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে একটি অধিবেশনের ডাক দেয় কংগ্রেস। অধিবেশন প্রস্তাব পেশ হয়, ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে ব্রিটিশ সরকার যদি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা না দেয়, তাহলে ভারতের পূর্ণ স্বরাজ ঘোষণা করা হবে।
সেই সময়সীমার মধ্যে ব্রিটিশ সরকার দ্বারা ভারত ডোমিনিয়নের মর্যাদা লাভ না করায় কংগ্রেস ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের ঘোষণা করে সক্রিয় আন্দোলন শুরু করে। এরপর দীর্ঘ ২০০ বছরের সুদীর্ঘ আন্দোলন শেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ইংরেজ শাসনের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। কিন্তু সেইসময় ভারতের নিজস্ব কোনও স্থায়ী সংবিধান ছিল না। তখন ব্রিটিশ সরকার প্রণোদিত ১৯৩৫ সালের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্টের সংশোধিত সংস্করণ অনুযায়ী স্বাধীন ভারত শাসিত হত।
পরবর্তী সময় সংবিধান সভার ঘোষণা করা হয়। স্বাধীনতার দু’সপ্তাহ পর ২৯ অগস্ট ড: বি. আর আম্বেদকরের অধ্যক্ষতায় ভারতে স্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশে একটি খসড়া কমিটি গড়ে তোলা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর সংবিধান সভায় ভারতীয় সংবিধানের খসড়া গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের হিন্দি ও ইংরাজি দুটি হস্তলিখিত কপিতে সাক্ষর করেন সভার ৩০৮ জন সদস্য। এর ঠিক দুদিন পর অর্থাত্ ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ভারত। ২৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে ভারতের সংবিধান কার্যকরী হয়। জাতীয় সংগীতের সময় ২১টি তোপের সেলামি দেওয়া হয়।

১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারির গুরুত্ব বজায় রাখতেই ১৯৫০ সালেও ২৬ জানুয়ারিই ভারতের লিখিত সংবিধান দেশবাসীর জন্য উত্সর্গ করা হয় গণপরিষদের তরফে। প্রথম গণতন্ত্র দিবসের প্যারেড রাজপথের পরিবর্তে তৎকালীন ইর্ভিন স্টেডিয়াম (বর্তমানে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম)-এ আয়োজিত হয়েছিল।
সেই দিন থেকেই থেকেই প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মর্যাদা পায় ভারত। কারণ সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারতকে ‘Republic’ বা ‘প্রজাতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করানো হয়েছে। ইংরেজি ভাষায় প্রজাতন্ত্রের প্রতিশব্দ ‘Republic’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ ‘RESPUBLICA’ থেকে। প্রজাতন্ত্র হল এমন একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যেখানে জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করে থাকে বা জনগণই সমস্ত ক্ষমতার উত্স।
এই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজা বা রানীর কোনও অস্তিত্ব নেই।ভারতের সংবিধানে ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দের সংযোজনের অর্থ হল, জনগণই ভারতের সকল ক্ষমতার উত্স। ভারতের সর্বোচ্চ পাদাধিকারী বা রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন। ইংল্যান্ডের রাজা বা রানির মত বংশ পরম্পরায় স্থলাভিষিক্ত হন না। আরও ভাল করে বললে, ভারতে প্রাপ্ত বয়স্কের সার্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত। অর্থাত্ ভারতে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত।