নিজস্ব প্রতিবেদন: অনেকে বার্ধক্যে ইউরিক অ্যাসিড জনিত সমস্যায় ভুগে থাকে। অনেকে বলেন কম বয়সে নাকি ইউরিক অ্যাসিড হয় না। মহিলাদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে না। রোগাদের গাউট হয় না।মুসুর ডাল, টমেটো, ঢ্যাঁড়স, পালংশাক খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে। গাউট একবার হলে সারে না।ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায় ইলিশ মাছ.খাওয়া যাবে না।শধু ডায়েটেই নাকি সেরে যায় বাড়াবাড়ি রকমের ইউরিক অ্যাসিড। অ-মদ্যপায়ীদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে না প্রভৃতি নানা রকমের চলতি ধারণা রয়েছে মানুষের মনে।তবে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কি বলেন তা জানাটা একান্ত আবশ্যিক।

ইউরিক অ্যাসিড আসলে কি ? রক্তে তার স্বাভাবিক মাত্রাই বা কত?
ইউরিক অ্যাসিড হল কার্বন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন ঘটিত যৌগ। খাবারে থাকা পিউরিন নামের একটি রাসায়নিকের বিপাকের ফলে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয় শরীরে। এটি রক্তে মিশে থাকে এবং অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড প্রস্রাব দিয়ে বেরিয়ে যায়। রক্তে প্রতি ডেসিলিটারে ৩.৫ থেকে ৭.২ মিলিগ্রাম ইউরিক অ্যাসিড থাকা স্বাভাবিক। তবে মহিলাদের রক্তে ৬ মিগ্রা/ ডেলি, পুরুষদের রক্তে ৭ মিগ্রা/ডেলি এবং অনুর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সিদের রক্তে ৫.৫ মিগ্রা/ ডেলি-র বেশি ইউরিক অ্যাসিড থাকা মানে কিছু সমস্যা রয়েছে।

ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে শরীরে কি সমস্যা হতে পারে?
বিপাকজনিত অনেক সমস্যাই হয়। তবে বেশিরভাগেরই কোনও লক্ষণ-উপসর্গ দেখা যায় না শরীরে। তবে মারাত্মক হারে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অনেকের আবার সামান্য ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই গাঁটে গাঁটে ব্যথা বাড়ে। বিশেষ করে গোড়ালিতে। একে গাউট বলে। কারও কারও আবার কিডনিতে পাথর জমার প্রবণতাও দেখা যায়।

কেন বাড়ে ইউরিক অ্যাসিড?
শরীরে তৈরি হওয়া ইউরিক অ্যাসিড স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মুত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায় শরীর থেকে। জিনগত কারণে,কিডনির সমস্যায়, ডায়াবিটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ অথবা হাইপো-থাইরয়েডিজম থাকলে, খুব বেশি মোটা হলে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থাকলে, অতিরিক্ত মদ্যপান করলে অনেক সময়ে শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়, অথবা রক্তে জমে থাকা ইউরিক অ্যাসিড যথাযথ ভাবে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে পারে না শরীর থেকে। অনেকের আবার দুটোই হয়। তখনই ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে থাকে রক্তে।
গাউটে(গেঁটে বাত) কেন বাড়ে ব্যথা?
ইউরিক অ্যাসিড কেলাস বা ক্রিস্টাল আকারে থাকে। সেটির আকার হয় ছুঁচের মতো। আর অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে এই সূঁচাকৃতি কেলাসগুলি অস্থিসন্ধির খাঁজে খাঁজে জমতে থাকে এবং হাড়ে ও পেশিতে ফোটে।যা ব্যাথার সৃষ্টি করে।
ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কি খাওয়া উচিত আর কি খাওয়া উচিত নয়?
যে সব খাবারে পিউরিন বেশি থাকে, সেগুলি খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ফ্যাটের কারণে রেড মিট (পাঁঠা/খাসি/গোরু) শুয়োরের মাংস), কোনও প্রাণির গুরদা/মেটে, সামুদ্রিক মাছ (টুনা/সার্ডিন/টাউট/হ্যাডক/ ম্যাকরেল/পমফ্রেট ইত্যাদি), দুগ্ধজাত খাবার এবং ফুক্টোজ আছে এমন খাবার (মধু, কমলা লেবু) খাওয়া যাবে না ।মদ্যপান,মিষ্টি নরম পানীয় ও মিষ্টি ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা।সব ধরনের সবজি (কড়াইশুটি, ছোলার মতো বীজজাতীয় খাবার বাদে)অবশ্যই,এর সাথে সাথে পরিমিত সয়াবিন, চিংড়ি, কাঁকড়া, ঝিনুক ও চিকেনও চলতে পারে। লো-ফ্যাট দুধ ও ছানা খাওয়া যেতে পারে। ইলিশ মাছ সামুদ্রিক হওয়া সত্ত্বেওঅল্প খেলে অসুবিধা নেই। প্রচুর জল, পাতি লেবুর সরবত, বাদাম, পিনাট বাটার, সবুজ শাক-সবজি ও টক জাতীয় ফল, কফি, আলু, ভাত, রুটি ইত্যাদি খেলে ইউরিক অ্যাসিড কমে।

কখন ওষুধ খাওয়া আবশ্যিক আর কখন নয় ?
ইউরিক অ্যাসিড সামান্য বেশি হলে এবং কোনও উপসর্গ না থাকলে ওষুধ খাওয়ার দরকার নেই।যদি ইউরিক অ্যাসিড সামান্য বেশি, গাউট, কিডনি সমস্যা,ডায়াবিটিস ইত্যাদি থাকে, তখনও ওষুধ খেতে হয়।ডায়েটিংয়ে সর্বোচ্চ ১-১.৫ মিগ্রা/ডেলি ইউরিক অ্যাসিড কমে যায় । তাই ইউরিক অ্যাসিড যদি মহিলাদের ৭-৮ এবং পুরুষদের ৮-৯ বা তার বেশি হয়, তখন সব ধরনের খাবার পরিমিত খেলে ও তার সাথে সাথে ওষুধ খেলে ইউরিক অ্যাসিডকে স্বাভাবিক রাখা যায়।সুতরাং নিজের স্বাস্থ্য নিজের হাতে।সুস্থ জীবন যাপন করুন,ভালো থাকুন।
