নিজস্ব প্রতিবেদন: আপনি কি রঙের চা খেতে পছন্দ করেন? প্রশ্নটা শুনে অবাক হলেন? ছোটবেলায় আমরা বড়োদের দেখতাম দুধ চা কিংবা লাল চা অর্থাৎ লিকার টি খেতে। আস্তে আস্তে আরও নানান ধরণের চায়ের প্রচলন শুরু হলো। যারা স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন তারা দুধ চায়ের পরিবর্তে চিনি ছাড়া চা খাওয়াটাই পছন্দ করেন। ধীরে ধীরে বাজারে এলো গ্রীন টি , ব্ল্যাক টি খাওয়ার প্রচলন। তবে এবার সকলকে আরো বেশি চমক দিতে এসে গেছে নীল চা। হ্যাঁ ,আপনি ঠিকই শুনেছেন। যা নাকি স্বাস্থ্যগুনে সবার উপরে।


২০১৮ সালে,গাইঘাটার বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস নীল চা তৈরির কাজ শুরু করেন। ‘কলকাতা ফার্মার্স’ নামক সংস্থাটি জনা চল্লিশ চাষীকে নিয়ে শুরু করে ‘নীল চাষ’। তবে এই নীল চা, যার কথা বার বার বলা হচ্ছে, তা তৈরী হয় কি দিয়ে? এর পিছনের ইতিহাসটাই বা কি? এই চা তৈরী হচ্ছে অপরাজিতা ফুল থেকে। একসময় গোবিন্দবাবু মুর্শিদাবাদে ফুল বিক্রি করতে যেতেন। সবসময় সব ফুল বিক্রি হতো না। বিক্রি না হওয়া ফুল ফেলে দিতে হতো। এইভাবে লোকসান নেমে এলো ব্যবসায়। গোবিন্দবাবু উদ্যান পালন দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেন। যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় অবিক্রিত অপরাজিত ফুল থেকে চা তৈরির কাজ।


বাজারের চাহিদা অনুযায়ী ফুল বিক্রির করার পর যে ফুল অবশিষ্ট থাকে তাকেই শুকিয়ে কাজে লাগানো হয়। গোবিন্দবাবু মূলত চাষিদের কথা মাথায় রেখে এই ব্যবসা শুরু করেন। সব ফুল বিক্রি না হলেও যাতে চাষিদের কোনো লোকসান না হয় সেদিকে তিনি বিশেষ নজর রাখেন। অতিরিক্ত ফুল তিনি কিনে নেন। এক কেজি ফুল শুকিয়ে ৩ টাকা করে পাওয়া যায়। এই ব্যাবসার ফলে গ্রামের মহিলারাও স্বনির্ভরশীল হচ্ছেন।ঘরে ঘরে,মহিলারা ফুল শুকোতে এখন ব্যস্ত। গোবিন্দবাবু বিশ্বাসী যে এইভাবে আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সুদৃঢ় হবে।


নীল চায়ের মধ্যে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুন রয়েছে। শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে এই চায়ের জুড়ি মেলা ভার। ক্লান্তিবোধ দূর করা এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে। এইসব পুষ্টিগুণের জন্য নীল চায়ের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। বর্তমানে দিল্লি, মুম্বাই এবং গোয়ায় বিভিন্ন কোম্পানিতে নীল চা রপ্তানি করছেন গোবিন্দবাবু। ভিয়েতনাম সহ বেশ কয়েকটি দেশে এই চা বহুদিন আগে থেকেই জনপ্রিয়। ভারতবর্ষেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে এই চা। আগামীদিনে আশা করাই যায় ভারতীয় বাজার কাঁপানোর সঙ্গে সঙ্গে হেলদি ডায়েটের তালিকায় নিজের একটা পাকাপোক্ত জায়গা করে নেবে এই নীল চা।