নিজস্ব প্রতিবেদন: বাঙালি যে ভ্রমণপ্রিয়, তা আর নতুন করে কিছু বলার নেই। জল হোক বা জঙ্গল, সমুদ্র কিংবা পাহাড়, যেকোনও জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা বললেই তাঁরা তৈরি। তার উপর আবার শীতের মরশুম বলে কথা। মিঠে রোদ গায়ে মেখে বেড়িয়ে পড়লেই হল। কিন্তু, অফিসের কাজ সামলে তো আর যখন তখন দু-চার দিনের ছুটি মেলে না। তবে আর চিন্তা করতে হবে না। ভ্রমণপিপাসুদের কথা মাথায় রেখে রইল উইকএন্ডে বেড়িয়ে পড়ার মত সেরা ঠিকানা। কলকাতা থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরত্বেই রয়েছে এই জায়গা। শহরের ব্যস্ত কোলাহল থেকে দূরে রেখে সবুজের সম্ভারে অক্সিজেন নেওয়ার জন্য ঘুরে আসুন পারমাদন ফরেস্ট বা বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য।
বনগাঁর কাছে পারমাদন বিখ্যাত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত অভয়ারণ্যের জন্য। জায়গাটা একেবারে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি। এই জায়গার খুব কাছেই থাকতেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯৫ সালে বিভূতিভূষণের নামে নামাঙ্কিত করা হয় এই অভয়ারণ্যকে। ইছামতী নদীর গা ঘেঁষে শিমুল, অর্জুন, শিশু, শিরীষ গাছের ভিড়ে হারিয়ে যেতে পারেন এখানে। অসংখ্য বাঁদর, ময়ূর আর খরগোশের আনাগোনা এই অভয়ারণ্যে। আর রয়েছে অজস্র পাখি। শঙ্খচিল, নীলকণ্ঠ, ফুলটুসির মতো পাখি। এছাড়া এখানে প্রায় ২৫০টা হরিণ আছে। ১৯৬৪ সালে ১৪টি চিতল হরিণ এই অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকেই অভয়ারণ্যের চেহারা নেয় পারমাদন।
ইছামতীর ধারে ৬৮ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে পুরো অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। ভিতরে চিলড্রেন্স পার্ক ছাড়াও রয়েছে ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানা আর বন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজ। ভিতরে বনভোজনও করা যায় অনুমতিসাপেক্ষে। আবার লজে ইচ্ছা হলে আপনি রাতেও থাকতে পারেন৷ অভয়ারণ্যের ভিতরে ঢোকার জন্য এবং যানবাহনের জন্য আলাদা প্রবেশমূল্য রয়েছে। প্রবেশমূল্য ১৫০ টাকা।
ইছামতীর বুকে নৌকোভ্রমণ- অভয়ারণ্য থেকে ফেরার পথে ইছামতীর বুকে নৌকোভ্রমণ করাটা কিন্তু আবশ্যিক। মাঝিভাইকে বলে নৌকো নদীর একটু গভীরে নিয়ে গেলেই নদীর প্রশস্ত রূপ প্রকট হয়। কোথাও নদীর দু’ধারে ঘন বাঁশঝাড়, কোথাও বা আলে ঘেরা মেঠোপথ। সূর্যাস্তের সময় ছবি তোলার জন্য একদম মনোরম পরিবেশ।
নীল কুঠী– এই অভয়ারণ্যের পাশেই রয়েছে নীল কুঠী । মেলে গাইডও। ১৮৫৯ সালে প্রতিস্থাপিত এই কুঠী সাক্ষী নীল চাষীদের ওপর ইংরেজদের প্রবল অত্যাচারের।
কীভাবে যাবেন- শিয়ালদহ থেকে বনগাঁ লাইনের ট্রেন ধরতে হবে। বনগাঁ স্টেশনে নামতে হবে। বনগাঁ থেকে মোটামুটি ৩০ কিমি দূরে এই জায়গা। স্টেশন থেকে ভ্যান বা টোটো ধরে সোজা পৌঁছে যেতে হবে মতিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে। ভ্যানে করে মিনিট পনেরো সময় লাগে। সেখান থেকে দত্তফুলিয়াগামী যেকোনও বাসে উঠতে হবে। পারমোদন ফরেস্টে যেতে হলে আগে নামতে হবে কলমবাগান বাজারে। সেখান থেকে অটো ধরে তবেই পারমোদন ফরেস্ট। বাসে প্রায় ৪০ মিনিট পর কলমবাগান বাজারে নেমে অটো ধরতে হবে। এখান থেকে অটোয় পারমোদন ফরেস্ট যেতে সময় লাগবে ৪৫ মিনিট। সড়কপথেও যাওয়া যেতে পারে পারমাদন ফরেস্টে৷ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়িতেও পৌঁছে যেতে পারেন এই ঠিকানায়৷