শ্রাবণী পাল: করোনা আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করে কন্টেইনমেন্ট জোন, স্কুল-কলেজ বন্ধ, লোকাল ট্রেন-মেট্রোয় নিষেধাজ্ঞা আনার পূর্বাভাস দিয়েছেন, সেখানে সেই রাজ্যের একাধিক জায়গায় পুরভোট কীভাবে সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবে কি রাজনীতির বেলায় করোনা আসে না? শুধু শিক্ষা কেন্দ্রের বেঞ্চে বেঞ্চেই এই ভাইরাস ঘুরে বেড়ায়?
এই নিয়ে জারি রয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধ, পাল্টা বিরোধ লেগেই রয়েছে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় যেখানে সমস্ত ক্ষমতা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে দিয়েছেন, সেখানেই বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার আস্থা রেখেছেন বিশেষজ্ঞদের উপর। দিলীপ বলেছেন, “এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলবেন।” অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশের অজুহাত দিয়েছেন সৌগত। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার উত্তরপ্রদেশে গিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন নির্দিষ্ট সময়েই সেই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন করানোর। এই অজুহাতই খাড়া করেছেন সৌগত। তিনি বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে যদি পুরভোট না হয় তবে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড বা পাঞ্জাবে কীভাবে বিধানসভা নির্বাচন সম্ভব?” দিলীপ আবার বলেছেন, “আমাদের দেড় বছরের অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষজ্ঞদের টিম তৈরি করে ঠিক করা উচিৎ নির্বাচন করানো সম্ভব কি না, উৎসবের আবহ আছে কি না।”
রাজনৈতিক তরজাকে পাশে রেখে যদি স্বাভাবিক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে হয়, তবে রাজ্যের করোনা পরিসংখ্যানটা একবার জেনে নেওয়া প্রয়োজন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। রাজ্যে এই মুহূর্তে সক্রিয় কেস ৮ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছি। শাসকদলের মুখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা যতটা সহজে আসে, ততটা সহজে কি নির্বাচন না করানোর কথাও আসে? নাকি সবার উপরে ‘রাজনীতি’ সত্য তাহার উপর কিছু নাই? একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সময় মতো নিবাচন হবে, শাসক বদলাবে, জনগণ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যেখানে সেই দেশের মানুষের বেঁচে থাকা প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে, সেখানে রাজনীতি করাটাই কি একমাত্র উপায়, নাকি মানবিক দিক থেকেও একবার রাজনীতিকদের ভেবে দেখা উচিৎ? এইধরনের একাধিক প্রশ্নের ঝঞ্ঝা কাটিয়ে যাতে সকলে সুস্থভাবে বাঁচতে পারে, এটাই কাম্য।