নিজস্ব প্রতিবেদন: রাজ্য রাজনীতিতে একঘেঁয়েমির কোনও স্থান নেই। একেরপর এক রোমাঞ্চ লেগেই রয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ও পাকাপাকি নয়। আজ এই ঘর, তো কাল ওখানে। দীর্ঘ তিন বছর বিজেপিতে কাটিয়ে তৃণমূলে ফিরলেন ভাটপাড়ার গেরুয়া সাংসদ অর্জুন সিং। রবিবার বিকেলে ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে হাজির হন তিনি। উপস্থিত ছিলেন পার্থ ভৌমিক, ডায়মন্ড সাংসদ, রাজ চক্রবর্তী, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ একাধিক দলীয় নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন। অভিষেকের হাত থেকে উত্তরীয় পরে বলেন, ‘ঘরে ফিরলাম’। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া বিকল্প নেই। সেকথা বুঝেই নাকি ফেরার সিদ্ধান্ত অর্জুনের। জানান পার্থ, জ্যোতিপ্রিয়রা। দল বদল করতেই বিজেপিকে একহাত নিয়েছেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘এসি ঘরে বসে রাজনীতি হয় না। দল যা করাবে রাজি আছি। যদি রেললাইন দিয়ে হাঁটতে বলে, আপত্তি নেই।’ কিন্তু তাঁর গায়ে এখনও বিজেপি সাংসদের রং। তবে কি ইস্তফা দেবেন তৃণমূলের নতুন সদস্য? এই প্রশ্নের উত্তরে অর্জুন বলেন, এখনও এমন দু’জন আছেন যাঁরা তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়ে রয়েছেন। তাঁরা পদ ছাড়ুক। আমার এক ঘণ্টাও লাগবে না ইস্তফা দিতে। আমি নির্বাচনে করতে প্রস্তুত।’ হাসি মুখেই উপস্থিত সকলে তাঁকে দলে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনিও মনে করেন, তাঁকে পেয়ে খুশি সকলেই। অন্যদিকে, তিনিও তৃণমূলের অভিযোগেই সুর মিলিয়েছেন। অর্জুনের দাবি, ‘আমি মনে করি কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হয়। শাসক পক্ষই এই ধরনের কাজ করে থাকে। বিরোধী দলগুলির এই নিয়ে ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি রাজনীতিক। রাজনৈতিক পথে লড়াই করতে জানি। আগামী দিনেও জবাব দেব।’
বাবুল সুপ্রিয় পদত্যাগ করেছেন। এখন বালিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক। বিজেপি ছেড়েই এসেছেন তিনি। একই পথ অবলম্বন করলেন ভাটপাড়ার বিজেপি সাংসদও। ঘর ফাঁকা হল গেরুয়া শিবিরের। ২০১৯ সালে লোকসভায় লড়ে রাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি গেরুয়া হয়েছিল। এখন সংখ্যাটা এসে ঠেকেছে ১৬ তে। ভুল বোঝাবুঝির কারণেই অর্জুন গিয়েছিলেন। নিজের মুখে একথা স্বীকার করেছেন। যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ আবার অন্য কথা বলছেন। তাঁর মতে, ‘বাধ্য হয়েই তৃণমূলে গেছেন অভিষেক। প্রশাসনিক চাপ দেওয়া হয়েছে তাঁকে।’ পাটশিল্প কেবলই অজুহাত! দল ছাড়ার পর ছেলে পবনের ফেরার কথাও প্রায় স্পষ্ট করেছেন অর্জুন সিং।
অর্জুন সিংয়ের রাজনৈতিক রং বদল এই নতুন নয়। হাতেখড়ি কংগ্রেস থেকে। যদিও তিনি জানিয়েছেন, শুরু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো। ভাটপাড়া থেকেই শুরু। ১৯৯৫ সালে কংগ্রেস থেকে কাউন্সিলর হন। এরপর ১৯৯৭ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর তিনি যোগদান করেন। ২০১৯ থেকে টানা ২২ বছর তৃণমূল কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১০ থেকে একটানা ৯ বছর পুরসভার চেয়ারম্যান পদ দখলে ছিল। ২০০১ সালে সদলবলে প্রথম তৃণমূল বিধায়ক হন। ‘১৯ সালে দল ছাড়েন। ওই বছরই লোকসভায় বিজেপির হয়ে যেতেন। দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে হন ভাটপাড়ার গেরুয়া সাংসদ। তবে বিধানসভায় পুত্রকে ভাটপাড়া ছাড়া ব্যারাকপুরের আর কোনও আসনই জিতিয়ে দিতে পারেননি। বিজেপির ভরাডুবির পর থেকেই দূরত্ব বাড়ে। সম্প্রতি, কেন্দ্রের পাটনীতি নিয়ে সরব হন। দিল্লিতে জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকের পরও শেষ রক্ষা হল না।