শ্রাবণী পাল: কথায় বলে ফাঁকা কলসি বাজে বেশি। রাজ্যের শাসক শিবিরের অবস্থা তেমনই। বিধানসভার হার এখনও গলা থেকে নামাতে পারেনি। নেতা ভাঙিয়ে যে জেতা যাবে না, একথা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মোদির বাংলা ব্রিগেড। ২০২০ থেকে নেতা ভাঙাচ্ছিল ভেতরে ভেতরে। শুভেন্দু, শিশির, সব্যসাচী সব নিয়ে রণংদেহি আকার নিতে চাইলেও হল না। দুমড়ে মুচড়ে একসার। এখনও হার ঝেড়ে উঠতে পারেনি বিজেপি। দিল্লি ব্রিগেড ফেল। নির্বাচনে শুরুতে যখন ছক কষা চলছিল, তখনই তৎকালীন রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন, দিল্লি থেকে নেতা আনিয়ে বাংলায় জেতা যাবে না। কিন্তু বাংলার আবেগ ধরতে পারেনি কেন্দ্র। তখন শুভেন্দু সদ্য বিজেপিতে। বাংলার জ্ঞানে পরিপক্কতা দেখাতে গিয়েই ফাঁদে পা। অবাঙালি ভাবাবেগ উপড়ে দিল বিজেপিকে। শিকড়টা একটু ধরে রেখেছিলেন দিলীপবাবু। কিন্তু কৃতজ্ঞতা তো দূর বিফলতার হাঁড়ি ভাঙা হল তাঁরই কাধে। আচমকাই অপছন্দের হয়ে উঠলেন। তালে গোলে দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হল তাঁকে। স্বর্বেসর্বা হয়ে বসলেন শুভেন্দু। হিসেব মতো কাছের মানুষ সুকান্ত মজুমদারকে বসালেন রাজ্য সভাপতির সিংহাসনে। তারপর থেকে বিজেপি এখনও সামলে উঠতে পারেনি। কলকাতা পৌরসভা নির্বাচন, অন্যান্য পৌরসভার নির্বাচনে একেবারে ভরাডুবি। এই লড়াইয়ে বিধানসভায় শূন্য থাকা বামেরাও বিজেপির থেকে উপরে। এক কথায় অধঃপতন। বিধানসভা নির্বাচন হয়ে এক বছর ঘুরেছে। বিজেপির অবস্থা এখনও সামলে ওঠার মতো হয়নি। দলের অন্দরে তৃণমূল স্তর কাচা রয়েছে বলে অভিযোগ। সারা বছর ঠান্ডা ঘরে বসে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতি করে একদিন গিয়ে জন্য বুধ স্তরের কর্মীদের চাঙ্গা করে তোলা কি সম্ভব? এই প্রশ্ন দলের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তাই মিঠুন চক্রবর্তীকে তড়িঘড়ি রাজ্যে আনা হয়েছে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল হয়ে নির্বাচনী প্রচার সারছেন তিনি। সঙ্গী রাজ্য সভাপতি। নেই শুভেন্দু। কিন্তু কেন? কী এমন হল যে কাছের সুকন্তকে ছেড়ে নিজে একাই প্রচার করছেন শুভেন্দু। মাস কয়েক আগের ঘটনা ধরা যাক। আচমকাই রব উঠতে শুরু করল, সুকান্ত মজুমদারের নামে নাকি দিল্লিতে নালিশ করছেন শুভেন্দু। বিজেপির একাংশের কথায় পিঠে ছুরি বসাচ্ছেন তিনি। কিন্তু বলার জায়গা নেই। বিজেপি নিজেই অন্য দল থেকে লোক এনেছে। এই পরিস্থিতি যদি বিবেচনা করা যায়, তবে দেখা যাবে বড় মুখ ছাড়া বিজেপিতে এই মুহূর্তে কিছুই নেই। না আছে বাংলার মুখ, না তৃণমূল স্তরের কর্মী। মুখ করার নিয়েও রয়েছে ঝামেলা। শুভেন্দু কে যদি বিজেপির বাংলার মুখ করা হয় তবে সুকান্ত এবং তাঁর সমর্থকের দিক থেকে বিজেপি ভেঙে পড়বে। একই পরিস্থিতি হবে সুকান্তকে মনোনীত করলেও। মিঠুন চক্রবর্তীকে এনে আপাতত পঞ্চায়েত উতরে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছে বিরোধীরা। সবাই জানে পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল কতটা শক্ত। এই মুহূর্তে শুধু ভিআইপি দিয়ে নির্বাচন জেতা সম্ভব নয়। তাই মিঠুনকে এনেছেন। কিন্তু শুভেন্দু বাবু মোটেই প্রচারে বেরোচ্ছেন না । কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, শুভেন্দু নাকি মনে করছেন প্রচারে কাউকে প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তিনি একাই একশো। কিন্তু বিষয়টা হল, এই মুহূর্তে বিজেপির অবস্থা পরীক্ষার আগের রাতে সিলেবাস শেষ করার মতো। গোটা বছর বসে থেকে পরীক্ষার আগে টনক নড়া আর কী। এসি ঘরে বসে যে রাজনীতি হয় না তা বুঝতে এখনও সময় আছে বিজেপির। অন্যদিকে, দিলীপকে বাদ দিয়েও দল গুছিয়ে উঠতে পারেনি। বরং বঙ্গ বিজেপি আরও ভেঙে পড়েছে। এই মুহূর্তে বিজেপির ভেঙে পড়ার জন্য অন্তর্দ্বন্দ্বই যথেষ্ট। ঠিক বিশাল এক নড়বড়ে বহুতলের মতো অবস্থা হয়েছে দলের। যেখানে দুটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে বিরাট আবাসন। দুটোই নড়বড়ে। কোনওরকমে সিমেন্টের পর সিমেন্ট জুড়ে দাঁড় করিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে পঞ্চায়েতে সম্ভাবনা একেবারেই কম। বর্তমানে দুর্নীতি নিয়ে জর্জরিত শাসকদল। ডেডলাইন ডিসেম্বরের কথা হলেও দল ভাঙানোর সম্ভাবনা যে একেবারেই নেই তা বুঝেছেন বিরোধী দলনেতা। তবে কিছু করার নেই একেবারেই। সরকার গড়ব গড়ব করে দল ভাঙনের মুখ আটকাতে পারছে না কোনও ভাবেই। অন্তর্দ্বন্দ্ব কোনও দিনই রাজনৈতিক দলকে বাঁচাতে পারেনি। তাছাড়া বাংলায় বিজেপিও জানে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। তবুও ইগোর লড়াইয়ের সঙ্গে লোক দেখানো একটা বিরোধিতা চলছেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির কপাল পোড়ার সম্ভাবনা বেশি। তবুও প্রধান বিরোধী দলের তকমা পাওয়া দলটা তো আর হারিয়ে যেতে পারে না। তাই সোশ্যাল মিডিয়া এবং শিরোনামেই আপাতত জীবিত।